শুক্রবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

ফ্রিঙ্গার প্রিন্টের জনক বাংলাদেশী বিজ্ঞানী কাজি আজিজুল হক | Kazi Azizul hoq


কাজি আজিজুল হকের পারিবারিক নাম কাজি সৈয়দ আজিজুল হক। তিনি জন্মেছিলেন ১৮৭২ সালে। ব্রিটিশ ভারতের খুলনা জেলার ফুলতলার পয়োগ্রাম কসবায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজের গণিতের ছাত্র ছিলেন।


আঙুল ছাপ আবিষ্কার

১৮৯২ সালে তিনি কাজ শুরু করেন কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিংয়ে। তখন অ্যানথ্রোপমেট্রি (মানবদেহের আকৃতি) পদ্ধতিতে অপরাধীদের শনাক্ত করার কাজ চলত। গণিতের ছাত্র এবং সদ্য সাব-ইন্সপেক্টর পদে চাকরি পাওয়া আজিজুল হক অক্লান্ত চেষ্টার ফলে তিনি যে পদ্ধতি উদ্ভাবন বা আবিষ্কার করলেন, তা-ই ‘হেনরি সিস্টেম’ বা ‘হেনরি পদ্ধতি’ নামে পরিচিত হলো] কাজের পুরস্কার হিসেবে আজিজুল হককে দেওয়া হয়েছিল ‘খান বাহাদুর উপাধি’, পাঁচ হাজার টাকা এবং ছোটখাটো একটা জায়গির। চাকরিতে পদোন্নতি পেয়ে হয়েছিলেন পুলিশের এসপি।


মৃত্যু

অবিভক্ত ভারতের চম্পারানে (বর্তমানে ভারতের বিহার রাজ্যের একটি জেলা যা উত্তর চম্পারান নামে পরিচিত) কাটে তার জীবনের শেষ দিনগুলো।[১] সেখানেই তিনি ১৯৩৫ সালে মারা যান। বিহারের মতিহারি স্টেশনের অনতিদূরে তার নিজের বাড়ি ‘আজিজ মঞ্জিল’-এর সীমানার মধ্যে তাকে সমাহিত করা হয়। ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের পর তার পরিবারের অন্য সদস্যরা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা আজকের বাংলাদেশে চলে আসেন। মরহুম আজিজুল হকের পুত্র আসিরুল হক পুলিশ বিভাগের ডিএসপি হয়েছিলেন। তার দুই বিখ্যাত নাতি ও নাতনি হচ্ছেন যথাক্রমে ইতিহাসের অধ্যাপক সালাহউদ্দিন আহমেদ (১৯২২-২০১৪) এবং শহীদ জায়া বেগম মুশতারী শফী (১৯৩৮-২০২১)।


মৌলিক গবেষণা

২০০১ সালে প্রকাশিত কলিন বিভান তার ফিঙ্গারপ্রিন্টস গ্রন্থে তার গবেষণার মৌলিকত্ব সম্পর্কে লিখতে গিয়ে জানাচ্ছেন, অ্যানথ্রোপমেট্রিক পদ্ধতি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আজিজুল হক ভয়ানক অসুবিধার সম্মুখীন হন। ফলে নিজেই হাতের ছাপ তথা ফিঙ্গারপ্রিন্টের শ্রেণীবিন্যাসকরণের একটা পদ্ধতি উদ্ভাবন করে সে অনুযায়ী কাজ করতে থাকেন। তিনি উদ্ভাবন করেন একটা গাণিতিক ফর্মুলা। ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙুলের ছাপের ধরনের ওপর ভিত্তি করে ৩২টি থাক বানান। সেই থাকের ৩২টি সারিতে সৃষ্টি করেন এক হাজার ২৪টি খোপ। বিভান আরও জানাচ্ছেন, ১৮৯৭ সাল নাগাদ হক তার কর্মস্থলে সাত হাজার ফিঙ্গারপ্রিন্টের বিশাল এক সংগ্রহ গড়ে তোলেন। তার সহজ-সরল এই পদ্ধতি ফিঙ্গারপ্রিন্টের সংখ্যায় তা লাখ লাখ হলেও শ্রেণীবিন্যাস করার কাজ সহজ করে দেয়।


ব্রিটেনের ‘দ্য ফিঙ্গারপ্রিন্ট সোসাইটি’ ফেন্সির উদ্যোগে চালু করেছে ‘দ্য ফিঙ্গারপ্রিন্ট সোসাইটি আজিজুল হক অ্যান্ড হেমচন্দ্র বোস প্রাইজ’। যাঁরা ফরেনসিক সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে সবিশেষ অবদান রাখবেন, এ পুরস্কার দেওয়া হবে তাদেরই।

Previous Post
Next Post
Related Posts