শুক্রবার, ২৯ জুলাই, ২০২২

ইবনে আল-নাফিস বা ইবনুন নাফিসের পরিচয় ও কৃতিত্ব | Ibn al-Nafis


হৃদযন্ত্রে রক্ত সঞ্চালন তত্ত্ব আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে একটি মৌলিক ও যুগান্তকারী আবিষ্কার। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সংজ্ঞা অনুযায়ী পালমনারি সঞ্চালন মানে হলো হৃদযন্ত্রের ডান প্রকোষ্ঠ থেকে শিরার মধ্য দিয়ে ফুসফুসে রক্ত চলাচল করা এবং ফুসফুসে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন গ্রহণ করার পর শিরার মধ্য দিয়ে হৃদযন্ত্রের বাম প্রকোষ্ঠে পুনরায় রক্ত ফিরে যাওয়া। হৃদযন্ত্রে রক্তপ্রবাহের এ আবিষ্কার হচ্ছে বিখ্যাত মুসলিম বিজ্ঞানী ইবনুল নাফিসের অমর কীর্তি।

তিনিই প্রথম ব্যক্তি গ্যালেন স্কুলের দীর্ঘকাল ধরে চলা বিতর্ককে চ্যালেন্জ করেছিলেন যে, কার্ডিয়াক ইন্টারভেন্ট্রীকুলার দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হতে পারে।

এর সাথে মিল রেখে তিনি বিশ্বাস করেছিলেন যে বাম ভেন্ট্রীকেলে পৌছানো সমস্ত রক্ত ফুসফুসের মধ্যে দিয়ে রায়।

ইবনে আল-নাফিসের ডান দিকের (পালমোনারি) সঞ্চালন সম্পর্কিত কাজ উইলিয়াম হার্ভের পরবর্তী কাজের (১৬২৮) পূর্বের। উভয় তত্ত্বই সঞ্চালন ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে। ২য় শতাব্দীর গ্রীক চিকিৎসক গ্যালেনের রক্তসংবহনতন্ত্রের শারীরবিদ্যা সম্বন্ধে তত্ত্বটি ইবন আল-নাফিসের কাজ পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ছিল, যার জন্য তাকে "সংবহনতন্ত্রের জনক" বা "সংবহন শারীরবৃত্তির জনক" হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

উনাকে নিয়ে গবেষণা কম হওয়ার কারণ- তার জীবনী সম্পর্কে তেমন কোন তথ্য পাওয়া যায় না। জানা যায় যে, তাঁর সমসাময়িক অন্য এক বিজ্ঞানী ইবনে আবি উসায়বিয়া মুসলিম স্কলারদের জীবনী লেখে খ্যাতি অর্জন করলেও ঈর্ষাবশত তাঁর নাম উল্লেখ করেন নি।

পুরোনাম:
আলাউদ্দিন আবুল হাসান আলী ইবনে আবিল হাজম ইবনুল নাফিস আল কোরাইশি আল মিসরি আশশাফি। সংক্ষেপে তিনি ‘ইবনুল নাফিস’ নামেই সর্বাধিক পরিচিত।

জন্ম:
তিনি ১২১৩ সালে ৬০৭হিজরী মোতাবেক দামেস্কের কারাশিয়ার নামের একটি গ্রামে আরব পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

জ্ঞানার্জন:
ইবনু নাফিস তার প্রাথমিক জীবন দামেস্কে অতিবাহিত করেন।

এরপর ১৬ বছর বয়সে তিনি দামেস্কের নুরি হাসপাতালে দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে ডাক্তারি পড়া শুরু করেন, যা দ্বাদশ শতাব্দীতে তুরস্কের বাদশাহ নুরউদ্দিন জেনগি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

মহাজজিব উদ্দীন আদ খাওয়ারের নিকট তিনি চিকিৎসা বিজ্ঞানে এত ব্যুপত্তি লাভ করেন যে, তাৎকালীন সময়ে তাঁর সমকক্ষ আর কেউ ছিল না।

তিনি বিখ্যাত দামাসিন চিকিৎসক ইবনে আবি উসাইবিয়ার সাথে সমসাময়িক ছিলেন এবং তারা দুজনেই দামেস্কের একটি মেডিকেল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা আল-দাখওয়ার কাছে শিক্ষা গ্ৰহণ করেছিলেন।

বর্ণঢ্যময় কর্মজীবন:
১২৩৬ সালে ইবনে আল-নাফিস তার কয়েকজন সহকর্মীর সাথে আইয়ুবিদ সুলতান আল-কামিলের অনুরোধে মিশরে চলে যান। ইবনে আল-নাফিস সালাহউদ্দিন আইয়ুবী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত আল-নাসেরি হাসপাতালে প্রধান চিকিৎসক হিসেবে নিযুক্ত হন।
সেখানে তিনি বেশ কয়েক বছর চিকিৎসা শিক্ষা ও অনুশীলন করেন।

তার অন্যতম উল্লেখযোগ্য ছাত্র ছিলেন বিখ্যাত খ্রীষ্টান চিকিৎসক ইবনে আল-কাফ। ইবনে আল-নাফিস আল-মাসরুরিয়া মাদরাসায় আইনশাস্ত্রও পড়াতেন। অন্যান্য পণ্ডিতদের মধ্যে তাঁর নাম পাওয়া যায়, যা দ্বারা বোঝা যায় যে তিনি ধর্মীয় আইনের অধ্যয়ন এবং অনুশীলনে  কতটা অভিজ্ঞ ছিলেন।

ইবনে নাফিস তার জীবনের অধিকাংশ সময় মিশরে অতিবাহিত করেন।

বাগদাদের পতন ও মামলুকদের উত্থান এজাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলীর সাক্ষী ছিলেন।

একসময় সুলতান বায়বার্স এর ব্যক্তিগত চিকিৎসক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এমনকি তিনি কায়রোর প্রধান চিকিৎসক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

পরবর্তী জীবনে, যখন তার বয়স ৭৪ বছর, তখন ইবনে আল-নাফিসকে নবপ্রতিষ্ঠিত আল-মানসোরি হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসক হিসেবে নিযুক্ত করা হয় যেখানে তিনি আমৃত্যু দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

চিকিৎসাশাস্ত্রে খ্যাতি অর্জনের কারণে তিনি বিপুল অর্থের মালিক হয়েছিলেন। কায়রো শহরের প্রাণকেন্দ্রে তাঁর জন্য নির্মিত করা হয়ছিল একটি বিলাসবহুল প্রাসাদ। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি তাঁর প্রাসাদ, বিশাল সম্পত্তি ও মূল্যবান গ্রন্থরাজি সুলতান আলাউদ্দিন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত (১২৮৪) মনসুরী হাসপাতালে দান করে যান।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে অবদান:
চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই মুসলিম বিজ্ঞানীর (Muslim Scientist) নাম স্মরণীয় হয়ে আছেন রক্ত চলাচল সম্পর্কে তৎকালীন প্রচলিত মতবাদের বলিষ্ঠ প্রতিবাদ এবং এর সম্পর্কে নিজের নতুন মতবাদের প্রকাশ করার মাধ্যমে। মানবদেহে বায়ু ও রক্ত সঞ্চালনের ব্যবস্থা আবিস্কারের জন্য বিখ্যাত ছিলেন ইবনে নাফিস।

তিনি ফুসফুস এবং হৃৎপিন্ডের এনটামি নিয়ে আলোচনা করেন । ইবনে সিনা এ্যারিস্টটলের মতবাদের সাথে একমত করে হৃৎপিন্ডের ৩টি হৃৎপ্রকোষ্ঠ রয়েছে বলে যে মত প্রকাশ করেছেন। তিনি তাঁর তীব্র প্রতিবাদ করেন । এ্যারিস্টটল মনে করতেন যে, দেহের পরিমাণে অনুসারেই হৃৎপ্রকোষ্ঠর সংখ্যার কম বেশী হয় তিনি এই মতকে ভুল বলে প্রমাণ করেন । তাঁর মতে হৃৎপিন্ডে মাত্র দু’টো হৃৎপ্রকোষ্ঠ আছে । একটা থাকে রক্তে পরিপূর্ণ এবং এটা থাকে ডান দিকে আর অন্যটিতে থাকে জীবনতেজ, এটা রয়েছে বাম দিকে। এ দু’য়ের মধ্যে চলাচলের কোন পথই নেই । যদি তা থাকত তাহলে রক্ত জীবনতেজের জায়গায় বয়ে গিয়ে সেটাকে নষ্ট করে ফেলত ।

হৃৎপিন্ডের এনাটমি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে ইবনুন নাফিস যুক্তি দেখান যে, ডান দিকের হৃৎপ্রকোষ্ঠে কোন কার্যকরী চলন নেই এবং হৃৎপিন্ডকে মাংসপেশীই বলা হউক বা অন্য কিছুই বলা হউক তাতে কিছু আসে যায় না।

তিনি মানবদেহে রক্তসঞ্চালন পদ্ধতি, ফুসফুসের সঠিক গঠন পদ্ধতি, শ্বাসনালী, হৃদপিন্ড, শরীরে শিরা উপশিরায় বায়ু ও রক্তের প্রবাহ ইত্যাদি সম্পর্কে গবেষণা করে চিকিৎসা বিজ্ঞানের জ্ঞানভাণ্ডার সমৃদ্ধ করেছেন।

রক্ত চলাচল সম্বন্ধে তৎকালীন প্রচলিত গ্যালেনের মতবাদকে ভুল প্রমাণিত করে চিকিৎসাবিজ্ঞানে ১৩০০ শতাব্দীতে বিপ্লবের সূচনা করেছিলেন কে এই বিখ্যাত মুসলিম বিজ্ঞানী (Muslim Scientist)।বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানে এ মতবাদটি সম্পূর্ণ বিজ্ঞান সম্মত বলে গৃহীত হলেও ইবনুন নাফিসকে বিজ্ঞান জগতে স্বীকৃতি দেয়া হয় না।  

শ্বাসনালির অভ্যন্তরীণ অবস্থা, মানবদেহে বায়ু ও রক্তপ্রবাহের মধ্যে ক্রিয়া-প্রক্রিয়ার কিভাবে ঘটে, ফুসফুসের নির্মাণ কৌশল সম্পর্কে গবেষণা করে আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্রকে সমৃদ্ধ করেছেন।

ইবনে নাফিসের (Ibn Al Nafis) এ যুগান্তকারী আবিষ্কার আধুনিক ও বিজ্ঞান সম্মত। কিন্তু ছয় শতাব্দী ধরে তাঁর এই মতবাদ সম্পর্কে আমাদের অন্ধকারে রেখেছিল। বর্তমানে এই গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ আবিষ্কারক হিসেবে সম্মান দেয়া হয় সতের শতকের বিশিষ্ট ইংলিশ চিকিৎসাবিদ উইলিয়াম হার্ভকে। অথচ হার্ভের জন্মের ৩০০বছর পূর্বে আরব বিজ্ঞানী ইবনে নাফিস এই থিওরি আবিস্কার করে। মিশরের বিখ্যাত চিকিৎসা বিজ্ঞানী ১৯২৪ সালে তার ডক্টরেট অভিসন্দর্ভে ইবনে নাফিসের উক্ত আবিষ্কারের কথা তুলে ধরেন।

অন্যান্য বিষয়ে অবদান:
চিকিৎসা ছাড়াও, ইবনে আল-নাফিস আইনশাস্ত্র, সাহিত্য এবং ধর্মতত্ত্ব অধ্যয়ন করেছিলেন। তিনি শাফিঈ মাযহাবের আইনশাস্ত্রের একজন  বিশেষজ্ঞ ছিলেন।

ব্যক্তি জীবনে সুন্নাহর অনুসরণকারী ইবনে নাফিস ধর্ম ও দর্শন পারস্পরিক সম্পর্কিত বিষয় বলে মত প্রকাশ করেন। দর্শন বিষয়ে তিনি মৌলিক গ্রন্থও প্রণয়ন করেন। মুসলিম সভ্যতার পতন রোধের উদ্দেশ্যে ইবনে নাফিস তরুণদেরকে সুন্নতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর অনুসরণ করতে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করেন এবং তিনি সুন্নতে রাসূল-এর অন্তর্ভুক্ত আচরণসমূহের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা প্রদান করেন। 

এই সময়ই তিনি রচনা করেন আরবী সাহিত্যের ক্ষেত্রে প্রথম দিকের মৌলিক উপন্যাস ‘‘আল রিসালাহ  আল কামিল ফি- সিরাতিল নবী’’। 

তার নিজের বৈজ্ঞানিক এবং দার্শনিক মতবাদের প্রকাশ করাও এই উপন্যাস রচনার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। তিনি ১২৬৮ থেকে ১২৭৭ সালের মধ্যে এই গ্রন্থ রচনা করেন। এই গ্রন্থটির নামের অর্থ হচ্ছে ‘‘নবীর সিরাত বা জীবন-এর উপর কামিলের রচনা বা থিসিস। গ্রন্থটি রিসালায়ে ফাদিল বিন নাতিক নামেও পরিচিত।

ইবনে বিভিন্ন শাস্ত্র বিশেষত শরীরবিদ্যা
ও মনোবিজ্ঞান বিষয়ে তার গবেষণার ফলাফল এবং বিভিন্ন বিজ্ঞান বিষয়ে তার মতামত ও এই বইটির মাধ্যমে প্রকাশ করেন। তিনি এই উপন্যাসে প্রমান করতে চেষ্টা করেন যে, মানুষের মন যুক্তি ও বিশ্লেষণের সাহায্য প্রাকৃতিক। দার্শনিক ও ধর্মীয় সার সত্যকে আবিষ্কার করতে পারে।

ইবনে নাফিসের এই উপন্যাস প্রাথমিক কল্পবিজ্ঞান (সায়েন্স ফিকশন) বিষয়ক রচনার একটি অন্যতম উদাহরণ। এই উপন্যাসে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক সত্যকে তার কাল্পনিক ব্যবহার দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ইবনে নাফিস তার এই রচনাটিকে বলেছেন ইসলামকে বৈজ্ঞানিক ও যুক্তিগতভাবে রক্ষার চেষ্টা।

ইবনে নাফিস ছিলেন ইসলামি সভ্যতা ও বিজ্ঞানের একজন প্রধান বিশেষজ্ঞ। বিজ্ঞান বিশেষত শরীরবিজ্ঞান বিষয়ে তিনি ছিলেন প্রথম আধুনিক গবেষক যার গবেষণা এখনো ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব কিছু ছাড়াও তিনি পৃথিবীর অন্যতম প্রথম এবং প্রথম মুসলিম সাইন্স ফিকশন রচয়িতা হিসেবেও চির স্মরণীয়।

রচনাবলী:
তার বইগুলির মধ্যে সবচেয়ে বড় বই হল আল-শামিল ফি আল-তিব (মেডিসিনের উপর বই), যা ৩০০টি খন্ড সমন্বিত একটি বিশ্বকোষ হওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। যাইহোক, ইবনে আল-নাফিস তার মৃত্যুর আগে মাত্র ৮০টি প্রকাশ করতে সক্ষম হন এবং কাজটি অসম্পূর্ণ থেকে যায়। এই সত্য সত্ত্বেও, কাজটি একজন ব্যক্তির দ্বারা লিখিত সর্ববৃহৎ চিকিৎসাশাস্ত্রে বিশ্বকোষগুলির মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচিত হয় এবং এটি তৎকালীন ইসলামী বিশ্বের চিকিৎসা জ্ঞানের সম্পূর্ণ সারসংক্ষেপ দেয়। ইবনে আল-নাফিস তার সমস্ত লাইব্রেরির সাথে তার বিশ্বকোষ দান করেন মনসুরি হাসপাতালে যেখানে তিনি তার মৃত্যুর আগে কাজ করেছিলেন।

সময়ের সাথে সাথে, বিশ্বকোষের বেশিরভাগ খন্ড হারিয়ে গেছে অথবা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে মাত্র ২টি খণ্ড এখনও মিশরে বিদ্যমান রয়েছে। মিশরীয় পণ্ডিত ইউসেফ জিদান এই কাজের বিদ্যমান পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ ও পরীক্ষা করার একটি প্রকল্প শুরু করেছিলেন যা ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার, বডলিয়ান গ্রন্থাগার এবং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘লেন মেডিকেল গ্রন্থাগার’ সহ বিশ্বের অনেক গ্রন্থাগারে তালিকাভুক্ত করা আছে।

তিনি হাদীসশাস্ত্রের উপরও কয়েকখানা ভাষ্য লেখেন । এছাড়া তিনি আরো বহু গ্রন্থ রচনা করেন । যেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে –  ‘আল্ মুখতার মিনাল আগজিয়া (মানবদেহে খাদ্যের সম্বন্ধে), ‘আল কিতাবুল মুহাজ ফিল কুহল (চক্ষু রোগ সম্বন্ধে), ‘শারহে মাসায়েলে ফিত, তিব্ব’, ‘তারিকুল ফাসাহ’, ‘মুখতাসারুল মানতেক’ প্রভৃতি।

ইবনে নাফিস কর্তৃক রচিত বাইশটি গ্রন্থের নাম জানা যায়। তাছাড়াও অন্যান্য রচনাবলীর মধ্যে রয়েছে-
১. আল-শামিল ফি আল-তিব্ব (Al-Shamil fi Al-tibb)
২. শারহ তাশরিন আল-কানুন (Sharh Tashrih al-Qanun)
৩. ন্যাচার অফ ম্যান (Nature of Man)
৪. এন্ডামিক (Endemics)

এছাড়া তিনি কয়েকটি ব্যাখ্যাগ্রন্থও রচনা করেন। চিকিৎসা, ভাষাতত্ত্ব ও আইন বিষয়কগ্রন্থ। তবে তাঁর রক্ত চলাচল বিষয়ে সুত্রের আবিষ্কার তাঁকে বিজ্ঞান জগতে সু-প্রতিষ্ঠিত করে রেখেছে।

মৃত্যু:
তিনি ৬৮৭ হিজরী মোতাবেক ১২৮৮ খ্রীঃ কায়রোতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন । তাঁকে সুস্থ করে তোলার প্রায় সকল চিকিৎসাই ব্যর্থ হয়ে যায় । অবশেষে মৃত্যু শয্যায় তাঁর মিসর ও কায়রোর চিকিৎসক বন্ধুরা তাঁর রোগের প্রতিষেধক হিসেবে তাঁকে মদ পান করতে অনুরোধ করেন । মদ পান করলেই তাঁর রোগ সেরে যাবে বলে তাঁরা পরামর্শ দেন । কিন্তু তিনি এক ফোঁটা মদ পান করতেও রাজি হলেন না । তিনি বন্ধুদেরকে উত্তর দিলেন, “আমি আল্লাহ পাকের দরবারে চলে যেতে প্রস্তুতি নিচ্ছি । আমি চিরদিন এ নশ্বর পৃথিবীতে থাকতে আসিনি । আল্লাহ আমাকে যতটুকু ক্ষমতা দিয়েছেন আমি চেষ্টা করেছি মানুষের কল্যাণে কিছু করে যেতে । বিদায়ের এ লগ্নে শরীরে মদ নিয়ে আল্লাহ পাকের দরবারে উপস্থিত হতে আমি চাই না ।”
অতঃপর ৬৮৭ হিজরীর ২১শে জিলকদ মোতাবেক ১২৮৮ খ্রীষ্টাব্দের ১৮ই ডিসেম্বর রোজ শুক্রবার সকালে এ মহামনীষী ইন্তেকাল করেন । মৃত্যুকালে তিনি তাঁর একমাত্র বাড়িটি এবং তাঁর সমস্ত বইপত্র মনসুর হাসপাতালে দান করে যান ।

তথ্য সুত্র:

1:ইনকিলাব
3: কালের কণ্ঠ ১৫-২-২০২২
3:Numan, Mohammed T. (২০১৪-১০-০১)। "Ibn Al Nafis: His Seminal Contributions to Cardiology"। Pediatric Cardiology
4: উইকিপিডিয়া

লিখেছেন— Raqib Hussain

Previous Post
Next Post
Related Posts