শুক্রবার, ১৫ জুলাই, ২০২২

মুসলিম নাবিক 鄭和 Zheng He জেঙ হি, পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কোদাগামার প্রায় ১০০ বছর আগে, ভারত মহাসাগর পাড়ি দিয়ে হুরমুজ প্রণালী ঘুরে পূর্ব আফ্রিকা ও দক্ষিণ আফ্রিকা পর্যন্ত পাড়ি জমান


১৪০৫  সালে সুবিশাল ৫০০ ফুট লম্বা ৩২০ টি   জাহাজের  নৌবহর  নিয়ে চীনের   নানজিং বন্দর  থেকে যাত্রা শুরু করে মিং সম্রাজ্যের  নৌবাহিনী।  ওই নৌবহরের এডমিরাল মুসলিম নাবিক মোহাম্মদ সাওবাও   ,চীনারা যাকে    জেঙ হিঃ নামে ডাকে। প্রতিটি জাহাজ কলম্বাসের জাহাজ থেকে  ৫ গুনের ও বেশি বড় সাইজের, জাহাজগুলি  ছিল কাঠের তৈরী   ফুটবল মাঠের  সমান  এবং  এই   নৌবহরে  সব মিলিয়ে  প্রায়  ৩০ হাজার  নাবিক, সৈনিক   ছিল, ওই সময়ে যেটা ছিল লন্ডনের জনসংখ্যার  অর্ধেক।  জেঙ হির  এই নৌবহর ছিল ওই সময়ে  পুরো   ইউরোপের সব দেশের মিলিত  নৌবাহিনীর   থেকেও বড়। 

কে এই মুসলিম নাবিক জহেঙ হি ? কিভাবে তিনি মিং সম্রাজ্যের সবচেয়ে বিখ্যাত এবং চীন ইতিহাসের সবচেয়ে বড় নৌবহর এর এডমিরাল হলেন।  জহেঙ হির জীবন , তার বিশ্ববিখ্যাত ৭ টি অভিযান এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ান মুসলিম জন্য তার  রেখে যাওয়া গৌরবময় ঐতিহ্য ও ইতিহাস সম্পর্কে লিখার   চেষ্টা   করবো।  

জহেঙ হির জন্ম ১৩৭২ সালে চীনের উনান প্রদেশে , যেখানে কেবলই মুসলিম  মঙ্গোল শাসকদের পরাজিত করে মিং সম্রাজ্য দখল করে নেয়।

জহেঙ হির বাবা মা প্রকৃত পক্ষে মদ্ধ এশিয়ার মুসলিম। জহেঙ হির বাবা মুসলিম ছিলেন এবং হজ ও করেছিলেন ১৩০০ সালে মাঝামাঝি সময়ে। তারা বাবা মঙ্গোলদের  সাথে , মিং সম্রাজ্যের বিপক্ষে যুদ্ধ করে মারা যায়। অনাথ হিসেবে জহেঙ হি  কে সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য নিয়ে   যাওয়া হয় পিকিং (বেইংজিং)   এ , নানজিং শহর বিদ্রোহীরা দখল করে নিলে, সেখানে যুদ্ধে  লড়েন , এই সূত্রে প্রিন্স জু ডি র সাথে বন্ধুত্ব হয়।  পরবর্তীতে জুডি রাজা হলে জহেঙ হি কে সেনাবাহিনীর জেনারেল বানান। 

জুডি   মিং সম্রাজ্যের ক্ষমতা পুরু দুনিয়ার কাছে জানাতে চেয়েছিলো , আর বহির্বিশ্বের সাথে বাণিজ্যিক আর কূটনৈতিক সম্পর্ক   স্থাপন করতে চেয়েছিলেন। 

এজন্যই  নানজিং শহরের পাশেই ইয়াংসি  নদীর কূলে    জাহাজ তৈরীর   কারখানা গড়ে তুলেন।  আশেপাশের সব বন্দর নগরী থেকে      সম্ভব  আরব   নাবিকদের     নিয়োগ দেওয়া হয়।  সুমাত্রা থেকে মালাক্কা পর্যন্ত   আরব নাবিকদের খুঁজে খুঁজে নিয়োগ দেয়া  হতো ,   কারণ ওই সময়ে আরব নাবিকদের     জোতিষবিদ্যা আর জাহাজ চালানোর  জন্য সবচেয়ে বিখ্যাত ছিল। 

পরবর্তী ৩০ বছরে এডমিরাল জেঙ হির এই ভাসমান শহরের সমান নৌবহর আর জাহাজ ভর্তি সোনা, রুপার মূদ্রা আর অন্নান্ন উপহার নিয়ে   সাগর পথে পুরো পৃথিবী  চোষে বেড়িয়েছেন। ৩০ হাজার দক্ষ নাবিক, সৈনিক আর নৌবহরে পর্যাপ্ত যুদ্ধসরঞ্জাম থাকা সত্যি ও জহেঙ হি তার এই ঐতিহাসিক অভিযানে কোথাও কোনো রাজ্যে আক্রমণ করেনি , কোনো ধরণের লুন্ঠন ও করেনি।  বরং যেখানে গিয়েছে সেখানেই উপঢৌকন হিসেবে আদিবাসীদের সোনা , রুপা, চীনা তৈজসপত্র দিয়েছেন। 

জহেঙ হি পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কোদাগামার  প্রায় ১০০ বছর  আগে ,  ভারত মহাসাগর পারি দিয়ে হুরমুজ প্রণালী ঘুরে  পূর্ব আফ্রিকা পর্যন্ত পাড়ি  জমান   এবং পরবর্তীতে দক্ষিণ আফ্রিকা পর্যন্ত ভ্রমণ করেন।  

ঝেঙ হির এই এক শহরের সমান ❝নৌবহর নিয়ে ২৮ বছর ৩৬ টি দেশে ভ্রমণ করেন।❞ ইউরোপিয়ান নাবিকদের মতো জহেঙ হি প্রতিরক্ষার প্রয়োজন ছাড়া কোথাও আক্রমণ করে না। 

জহেঙ হির তৃতীয় অভিযানে শ্রীলংকার উপকুলে নোঙ্গর ফেললে , শ্রীলংকার রাজা বাধা দেয় এবং আক্রমণ করে, জহেঙ হির দক্ষ  সৈন্যরা তাদের আধুনিক অস্ত্র দিয়ে শ্রীলংকার রাজা কে পরাজিত করেন  এবং বন্দি করে রাজাকে পিকিং (বেইংজিং ) নিয়ে যান তার বিচার করতে।

মালাক্কার কাছ থেকে ওই সময় থাইল্যান্ড প্রতিবছর ট্যাক্স হিসেবে স্বর্ণ মুদ্রা নিতো ওই সময় , মালাক্কার রাজা মিং রাজ্ দরবারে গিয়ে সাহায্য চাইলে , জহেঙ হি মাল্লাকা আসে থাইল্যান্ডের ট্যাক্স নেয়া বন্ধ করে।  পরবর্তী ১৩০ বছর মালাক্কা শান্তিতে ছিল মিং সম্রাজ্যের সাহায্যে। 

জহেঙ হির বাংলা ভ্রমণঃ

১৪১৪ সালে চিটাগাং পোর্টে এসে ভিড়েন জহেঙ হির নৌবহর।  নৌবহর থেকে জহেঙ হি আর তার সাথে কয়েকজন নাবিক আর সাথে সঙ্গী নিয়ে সোনারগাওঁ   নৌকা নিয়ে আসতেছিলেন।  জহেঙ হির মধ্যস্থতায় ওই সময়ে জৈনপুর রাজ্যের সাথে বেঙ্গল রাজ্যের  বিরোধের অবসান ও হয়। এই বাংলা ভ্রমণ সম্পর্কে তাদের লিখায় পাওয়া যায়— ❝আমরা সুমিত্রার সম্রাজ্য থেকে রওনা দিয়ে ২০ দিন জাহাজ চালিয়ে চিটাগাং বন্দরে আসি , তারপর ৫০০ লি  (২৫০কিঃমিঃ ) ছোট নৌকায় করে সোনারগাঁ যাই। তারপর আমরা সুলতানের প্রাসাদে যাই , আমাদের  অভ্যর্থনা জানানোর জন্য কয়েক হাজার লোক দাঁড়িয়েছিল।  সুলতানের রাজপ্রাসাদে অনেক উঁচু উঁচু পিলার  রঙে তার মধ্যে পাখি আর ফুল  খচিত নকশা করা।❞

আর বাংলার মানুষ সম্পর্কে বলেছেন— ❝স্থানীয় লোকজন সবাই ইসলামের অনুসারী ,  সবাই  সৎ  ও  সহজ সরল, তারা একটা ভাষায় কথা বলে নাম হচ্ছে বাঙালি ,  পুরুষরা   মাথায় সাদা কাপড় পেঁচিয়ে রাখে (পাগড়ী ) আর সাদা লম্বা শার্ট পরে।  কোমরের নিচে থেকে পা পর্যন্ত বিভিন্ন রঙের কাপড় পরে ( লুঙ্গি) , মহিলারা  খুব ছোট শার্ট পরে (ব্রাউস) আর লংব কাপড় দিয়ে শরীর পেঁচিয়ে রাখে।  পুরুষ আর মহিলা আলাদা স্থানে খাবার খায়।  পুনর্বিবাহ করার কোনো প্রথা নেই এখানে।  এতিম আর বিধবা , যারা নিজেদের ভরণ পোষণ করতে পারে না , গ্রামের সবাই মিলে পালা করে তাদের দায়িত্ব নেয় , যাতে করে তাদের অন্য গ্রামে গিয়ে ভিক্ষা করে খেতে না হয়, যেটা দেখে এখানে লোকজনের ন্যায়পরায়ণতার পরিচয় পাওয়া যায়।  পুরু রাজ্যই ঘন বসতি , প্রচুর সম্পদ আর অঢেল আবাদি জমি রয়েছে এখানে।  এখানে  আইন কানুন অনেক সহজ , অপরাধী আর আইন অমান্যকারীদের বেত্রাঘাত, জেল আর নর্বাসনে পাঠানোর প্রথা চালু আছে।❞

বাংলা ভ্রমণের শেষে বাংলার সুলতান জহেঙ হির নৌবহরে একটি আফ্রিকান জিরাফ উপহার দেন।  সেই জিরাফ চীনে  নিয়ে গেলে রাজদরবারে এক হট্টগোল বেজে যায়, কারণ চীনারা কখনোই জিরাফ দেখেনি , আর জিরাফ দেখতে চীনা কুইলিন নামক এক কাল্পনিক প্রাণীর মতো দেখতে , এই প্রাণী আসলে , সেই রাজ্যে আশীর্বাদ আসবে বলে তারা বিশ্বাস  করতো।

রাজদরবারের কবি সাহিত্যিক গান পদ্য লেখকরা ওই জিরাফ আর রাজার গুনগান করে ১৬ টি ভলিউমের বই লিখেন। 

মা হাওয়ান ৭ম এবং সর্বশেষ অভিযানে মক্কায় জহেঙ হির সাথে হজ করার জন্য যায়। ঐসময়ের কাবা আর চারপাশের বর্ণনা দেন এবং হজ সম্পর্কে বলেন— ❝প্রতি চন্দ্রবর্ষের ১২তম  মাসের ১০ম দিন বিদেশী মুসলিমরা , অনেক সময় ১বছর বা দুইবছর  দীর্ঘ ভ্রমণের পর , হলের ভিতর প্রার্থনা করতে আসে।  সবাই কাবা ঘরের  শণ সিল্ক এর টুকরা কাপড় যাওয়ার আগে স্মৃতি হিসেবে নিয়ে যায়।  যখন এই কাপড় কেটে নেয়া হয়ে যায় , রাজা এখানে আবার ও আরেকটা কাপড় দিয়ে আবার ও ঢেকে রাখে।  এই ঘটনা ঘটতেই থাকে, বছরের পর বছর - কোনো বিরতি ছাড়া।❞

জহেঙ হয় দীর্ঘ ২৮ যশোরে ৭ টি অভিযান পরিচালনা করেন , এ সময় ৩৬ টি দেশ ভ্রমণ করেন , সব জায়গা থেকে কিছু কিছু নিদর্শন নিয়ে আসেন মিং  সম্রাজ্যের দরবারে।  অনেক অধিবাসী লোক আসেন জহেঙ হির সাথে, রাজা জুডি কে শুভেচ্ছা জানাতে। 

তারা নানজিং থেকে মোল্লাকে সিলন কালিকট হয়ে হুরমুজ হয়ে আফ্রিকার উপকূলের বন্দরে বন্দরে ঘুরে বেড়ান। 

১৪২১ সালের   Zheng He জেঙ  হী র নৌবহর একবার আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল থেকে ৪৫ দিন সাগর পথে ভ্রমণ করেন। তার এই আল্টান্টিক সাগরের বুকে ভ্রমণের  ম্যাপ ও ড্রয়িং ও রয়েছে। ব্রিটিশ নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেনেন্ট কমান্ডার ও লেখক গ্যাভিন মেনজিস তার বই "১৪২১: যে বছর চীন আমেরিকা আবিষ্কার করে " বইতে  Zheng He জেঙ  হী র ম্যাপ আর ড্রয়িং এর সাথে ক্যারিবীয়ান দ্বীপ  পুঞ্জ্যের সদৃশ ও আরো অন্নান্য প্রমানের ভিত্তেতে সিদ্ধান্তে পৌঁছেন। জহেঙ হির নৌ বহর আমেরিকা পর্যন্ত এসেছিলো এবং পুরো পুরু পৃথিবী জলপথ ঘুড়ে আবার ফিরে এসেছিলেন। তার মানে ক্রিস্টোফার কলম্বাসের  ৭০ বছর আগে আমেরিকা গিয়েছিলেন এবং ফার্দিনান্দ ম্যাগেলেন এর ১০০ বছর  পূর্বে পুরু পৃথিবী জল পথে চক্কর দিয়েছেন। 

যদিও   Zheng He জেঙ  হী কোনো কিছু আবিষ্কারের কথা দাবি করেননি কখনো।  কারণ   Zheng He জেঙ  হী র যাত্রায় তার কাছেও আফ্রিকার বিভিন্ন উপকূলের বন্দর থেকে সংগ্রহ করা ম্যাপ ছিল , যে ম্যাপ গুলোতে দক্ষিণ আর উত্তর আমেরিকার ছিল।

আরেক ইতালিয়ান বিখ্যাত ভ্রমণকারী অভিযাত্রিক নিকোলো দে কোনটি , যে কিনা ২৫ বছর আরবের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেরিয়েছিলেন।  সে নিজেও একবার   Zheng He জেঙ  হী র নৌ বহরে করে ভারত থেকে আফ্রিকা এসেছিলেন , এবং তার সহায়তায় ফেরা মাউরো নামক বিখ্যাত ইতালিয়ান ম্যাপ প্রস্তুতকারী ১৪৬০ সালে পৃথিবীর ম্যাপ তৈরী করেন যেখানে আল্টান্টিক সাগরের অন্যপাশে আরেক মহাদেশের উর্ল্লেখ ছিল।  ১৪৯২ সালে ক্রিস্টোফার কলম্বাস আমেরিকা যাত্রার সময় তার হাতে চার-পাঁচটি  ম্যাপ ছিল,  তার মধ্যে এই ম্যাপটিও ছিল, অন্নান্য ম্যাপ আফ্রিকা থেকে সংগ্রহ  করা 

Zheng He জেঙ  হী র সাথে আরবদেড় আরবিতে   যোগাযোগ করার জন্য  ছিল কয়েকশো অনুবাদক। 

ওই অভিযানে মা হুয়ান নামের আরেক মুসলিম ভ্রমণকারী ও ছিল   Zheng He জেঙ  হীর সাথে। তার লিখা বই  'The Overall Survey of the Ocean's Shores' " "সমগ্র মহাসাগরের উপকূলের জরিপ "

জহেঙ হির সাথে আরবদেড় আরবিতে   যোগাযোগ করার জন্য  ছিল কয়েকশো অনুবাদক। 

ওই অভিযানে মা হুয়ান নামের আরেক মুসলিম ভ্রমণকারী ও ছিল ঝেঙ হির সাথে। তার লিখা বই  'The Overall Survey of the Ocean's Shores'

❝সমগ্র মহাসাগরের উপকূলের জরিপ❞

আরেক নাবিক ফেই জিন তার লিখা বই "(Description of the Starry Raft) “নক্ষত্র খচিত ভেলার বর্ণনা” । 

জহেঙ হির অভিযান সম্পর্কে যা কিছু জানা যায় প্রায় সব কিছুই এই দুইটি বই থেকে।  জহেঙ হির লিখা জাহাজের লগ বই, মানচিত্র, চার্ট সব কিছুই  আগুন ধরিয়ে মিং সম্রাজ্যের সব অবদান মুছে দেয়ার চেষ্টা করে ১৫২২ সালে ওই সময়ের ঈর্ষাপরায়ণ রাজা।

**দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় ইসলামের প্রচারে জহেঙ হির ভূমিকা অনেক।**  তিনি যেখানেই যেতেন সেখানেই ইসলাম প্রচার করতেন।  ইন্দোনেশিয়া, বিশেষ করে জাভা এবং সুমাত্রাতে , মালায়শিয়া , ফিলিপিন , মালাক্কা (সিঙ্গাপুর) এসব দেশে ইসলাম প্রচারের পিছনে এডমিরাল জহেঙ হি  এই নৌ অভিযান অনেক গুরুত্বপূর্ণ।  মালাক্কার (সিঙ্গাপুর) রাজা পরমেসওরা    Zheng He জেঙ  হীর ভ্রমণের পরপরই নাম পরিবর্তন করে ইস্কান্দার শাহ রাখেন , তিনি মুসলিম হয়েছিলেন কিনা এটা নিয়ে বিভিন্ন ধরণের মতবিরোধ ছিল , কিন্তু তার ছেলে মেঘাট ইসলান্দার শাহ (২য়  সুলতান) এবং নাতিন মোহাম্মদ শাহ (৩য়  ) মুসলমান ছিলেন। 

জহেঙ হির   স্মরণে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশেই অনেক মসজিদ আর জাদুঘর আছে। 

ইউরোপিয়ান বিখ্যাত  আবিস্কারক ভাস্কো দাগামা , ক্রিস্টোফার কলোম্বাস , ফার্দিনার্ড   ম্যাগেলেন ,   আমেরিগো ভেসপুচ্চি , ক্যাপ্টেন কুক এর ইতিহাস ঘাটলে বুঝা যায় , তারা আসলে কিছুই আবিষ্কার করেননি।  তাদের সবার হাতে খুব স্পষ্ট ম্যাপ আর ন্যাভিগেশানাল চার্ট ছিল।  তারা অজানা কোনো    অভিযানে  কখনোই বের হয়নি।  তারা  এমন জায়গায় গিয়েছে যেখানে অনেক আগে থেকেই    সাহসী নাবিকেরা গিয়েছে এবং সেইসব জায়গার সুস্পষ্ট ম্যাপ বানিয়েছে। ইতিহাসে দেখা যায় ,  অন্য সভ্যতার আবিষ্কারে , কৃতিত্বে নিজেদের বলে  চালিয়ে দেওয়াটা  ইউরোপিয়ানরা হরহামেশাই করেছে।  তাদের যাত্রা পথে আদিবাসীদের  খুন খারাপি  ধর্ষণ এমন কোনো নেক্কারজনক অপরাধ নেই যেটা তারা করেনি।  তারপরও  তারা বিখ্যাত , কারণ  ইতিহাস তারা   নিজেরাই লিখেছে, এবং  নৌঅভিযানের আসল পথিকৃতি নায়ক যারা তাদের নাম ছাপিয়ে গেছে। 

প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কেন জেঙ হীর  নাম শুনিনি ? জেঙ একাই ক্রিস্টোফার কলম্বাস, ভাস্কোদাগামা , মাগেলেন যা যা আবিষ্কার করেছে বলে ক্রেডিট নেয় , তার সব কিছুই প্রায় একশো বছর  আগেই করেছেন।  জিঙ হী  মুসলিম ছিলেন  ,  আমাদের মুসলমানের কাছে তিনি কোন জাতি গোত্রের এটা মুখ্য   হওয়া উচিত না।  জাতীয়তাবাদের কালবিষ যেন আমাদের আরেক মহান মুসলিম বীরের অবদানকে সম্মান করা থেকে বিরত না রাখে।  আমিন

Zheng He জেঙ  হী নিয়ে বাংলা ডকুমেন্টারী: https://youtu.be/0qyh37VxV2c


তথ্যসূত্র—
১. The Overall Survey of the Ocean's Shores by Ma Huan (1451 )
২. Description of the Starry Raft by Fei Xin (1436)
৩. 1421: The Year China Discovered America, Gevin Manzies (2003)
৪. When China Ruled the Seas: The Treasure Fleet of the Dragon Throne, Louise Levethes (1997)


লিখেছেন— মোহাম্মদ জুলফিকার রিজন


Previous Post
Next Post
Related Posts