শুক্রবার, ১৫ জুলাই, ২০২২

রাজমহলের যুদ্ধঃ বাংলার সার্বভৌমত্ব হারানোর হৃদয়বিদারক উপাখ্যান


বাংলা সালতানাতের (سلطنت بنگاله ) কররানি বংশের রাজত্বকালে ১৫৭৫ সালের ৩রা মার্চ মোগলমারির যুদ্ধে মুঘল বাহিনীর হাতে বাংলার পরাজয় ঘটে বিশ্বাসঘাতকতা, স্বার্থপরতা ও ষড়যন্ত্রের দরুণ। ফলে বাংলা সালতানাত ও মুঘল সাম্রাজ্যের মধ্যে ২১শে এপ্রিল, ১৫৭৫ স্বাক্ষরিত হয় কটকের সন্ধি। সন্ধি অনুসারে বাংলা ও বিহারের উপর মুঘল নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠত হয় এবং বাদশাহ দাঊদ শাহ কররানির রাজত্ব কেবলমাত্র উড়িষ্যায় সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। কিন্তু দ্রুত রাজধানী গৌড়ে প্লেগ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়লে ১৪ জন মুঘল সেনাপতি সহ ৫০০০ সৈন্য মহামারিতে নিহত হন। সুবাদার খান-ই-খানান মুনিম খানও প্লেগ আক্রান্ত হয়ে ২৩ শে অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সুলতান দাঊদ শাহ কররানি উড়িষ্যা থেকে সসৈন্যে অগ্রসর হন এবং গৌড় পর্যন্ত প্রতিটি মুঘল দুর্গের নিয়ন্ত্রণ নিতে থাকেন। অন্যদিকে পূর্ব বাংলায় ভাটিরাজ ঈসা খাঁ মাসনাদ-ই আলা তাঁর শক্তিশালী নৌবহর নিয়ে মুঘল মীর-ই-বাহার শাহবার্দীর নৌবহরকে আক্রমণ করে বিধ্বস্ত করে দেন এবং মুঘলদের সমগ্র পূর্ববাংলা থেকে বিতাড়িত করেন। এভাবে সমগ্র বাংলা ও উড়িষ্যা কররানি সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। অতঃপর সুলতান দাঊদ শাহ চলে আসেন রাজমহলে।

এ খবর সম্রাট আকবরের কানে গেলে তিনি  খান-ই-জাহান হোসেন কুলী খান তুর্কমানকে ২০,০০০ সৈন্যসহ বাংলার সুবাদার নিযুক্ত করে বাংলার উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেন। সঙ্গে আকবর আরও ৫ হাজার সৈন্য দেন তাদের সহযোগিতা করার জন্য। খান জাহান তাঁর সৈন্যবহর নিয়ে বিহারে গমন করে বিহারী বাহিনীর সাথে মিলিত হন। এরপর তাদের সাথে মিলে যাত্রা করেন তেলিগড়ে। তেলিয়াগড় বিহার থেকে বাংলায় প্রবেশের একমাত্র পথ। তেলিয়াগড় দুর্গ একটি দুর্গম, দুর্জয় দুর্গ। এর উত্তরে বাংলা ও বিহারের ঐতিহাসিক সীমা-নির্দেশক রাজমহল পর্বতমালা এবং দক্ষিণে সুপ্রশস্ত মহানদী  গঙ্গা। তারই মাঝে অবস্থান ছিলো দুর্গম, দুর্ভেদ্য তেলিয়াগড় দুর্গের। এই দুর্গে সামান্য কিছু সংখ্যক সৈনিক মোতায়েন করে শত্রুকে ঠেকিয়ে রাখা যেতো। সুলতান দাঊদ শাহ কিছুদিন আগেও এই দুর্গে ছিলেন, তবে রাজমহলে অবস্থান নেয়ায় তিনি এখান থেকে সৈন্যবহর তুলে নেন। শুধু সামান্য কিছু সৈন্য তেলিয়াগড় দুর্গে নিযুক্ত ছিলো। এই ১৫০০ জন সৈন্যের কাজ ছিলো মুঘল আক্রমণ প্রতিহত করা। মুহূর্মুহূ গোলা বর্ষণ করেও তেলিয়াগড়ের পতন ঘটানো গেলো না। কিন্তু তেলিয়াগড়ের পতন ঘটলো বাংলার জনৈক সৈনিকের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে। সেই সৈনিক বিশ্বাসঘাতকতা করে দুর্গের গোপন প্রবেশ পথ খান জাহানকে জানিয়ে দেয়। ফলে মুঘল বাহিনী অতি সহজেই দুর্গ দখল করে নেয়। বাংলার সৈন্যরা আত্মসমর্পণ করলেও তাদের সবাইকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করলেন খান জাহান। তেলিয়াগড় দখল করে তিনি যাত্রা করলেন রাজমহলের পথে। রাজমহলে পৌঁছাতে পৌঁছাতে মুঘল বাহিনী বিশাল আকার ধারণ করলো। খান জাহানের সাথে ২০ হাজার সৈন্য, মুঘল বিহারী বাহিনী ২০ হাজার সৈন্য, মুঘলদের সাথে যোগদানকারী বাংলার পরাজিত ১০ হাজার সৈন্য, অতিরিক্ত ৫ হাজার সৈন্য, খান জাহানের নিজের ৫ হাজার মানসাব, এছাড়াও অন্যান্য মানসাবদারেরা ছিলো যাদের প্রত্যেকের অধীনে কয়েক হাজার সেনা ছিলো। আকবরের রাজস্ব মন্ত্রী রাজা তোডরমল, বিহারের সুবাদার মুজাফফার আলী খান তুরবাতি, শাহাম খান, কিয়া খান- এরা প্রত্যেকেই ছিলেন ৪ হাজার সৈন্যের মানসাবদার। জানবারী ছিলেন ২ হাজার সৈন্যের মানসাবদার। রাজা গোপাল, জান মুহাম্মাদ বাহসুতী, ইসমাইল কুলি খান, ইসমাইল বেগ, ইলতিমাত খান, খাওয়াজাসারা- এরা ছিলেন প্রত্যেকে ১ হাজার সৈন্যের মানসাবদার। বাবা খান কাকশাল এবং কিয়া খান ছিলেন ৩ হাজার সৈন্যের মানসাবদার।

সবমিলে মানসাবের সৈন্যসংখ্যা ছিলো মোট ৩৬ হাজার, বিহারী বাহিনী ৫০ হাজার, অতিরিক্ত সহায়ক সৈন্য ৫ হাজার- মুঘল  বাহিনীর মোট সৈন্য সংখ্যা দাঁড়ায় ৯১ হাজার। অন্যদিকে, বাংলার বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন ঘাঁটিতে মোতায়েন থাকায় স্বল্প সময়ের মধ্যে বেশিসংখ্যক সৈন্য রাজমহলের প্রান্তরে জড়ো করতে পারেন নি সুলতান দাঊদ শাহ কররানি।

সুলতান দাঊদ শাহর ছিলো বিশাল সেনাবাহিনী। তাঁর ছিলো ১ লক্ষ ৪০ হাজার পদাতিক, ৪০ হাজার অশ্বারোহী, ৩৬০০ টি রণহস্তী এবং ২০ হাজার তোপ (বেশিরভাগই ভারী তোপ ছিল)। কিন্তু বাংলার বিভিন্ন ঘাঁটিতে মোতায়েন থাকায় অতি স্বল্প সময়ের মধ্যে তিনি জড়ো করতে পেরেছিলেন মাত্র ৫০ হাজার সৈন্য এবং ৩২০০ টি রণহস্তী। এই রণহস্তী এবং গোলন্দাজ বাহিনীই ছিলো বাংলার বাহিনীর গর্ব ও ঐশ্বর্যের মূল ভিত্তি। দাঊদ শাহ কররানি রাজমহলে তাঁর শিবির স্থাপন করে চতুর্দিকে পরিখা খনন করলেন। রাজমহলের দুইদিকে গঙ্গা, দক্ষিণে ৭০ মাইল ব্যাপী বিস্তৃত রাজমহল পর্বতমালা- তারই মাঝে শিবির স্থাপন করলেন সুলতান দাঊদ কররানি।

মুঘল বাহিনীর সৈন্যবিন্যাস- অগ্রবর্তী মূল বাহিনীর কমান্ডে ছিলেন খান জাহান হোসেন কুলী খান তুর্কমান।  তাঁর ডানদিকে ছিলেন বিহারের সুবাদার কুখ্যাত সমকামি মুজাফফর আলী খান তুরবাতি বিহারের বাহিনী নিয়ে, বামে ছিলেন রাজা তোডরমল ও রাজা গোপাল, জানবারী সহ প্রমুখ বড় বড় মানসাবদারেরা। মাঝের বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন কিয়া খান, এছাড়া ছিলেন ইসমাইল বেগ ও ইসমাইল কুলি খান, স্ব-স্ব মানসাবের সেনাদের নিয়ে। পেছনের বাহিনীতে বাংলার পরাজিত সৈন্যদের নিয়ে ছিলেন শাহাম খান।

বাংলার বাহিনীর সৈন্যবিন্যাস-  অগ্রবর্তী মূল বাহিনীর কমান্ডে ছিলেন স্বয়ং বাদশাহ দাঊদ শাহ কররানী। বাদশাহর ডানদিকে ছিলেন মহাদুর্ধর্ষ সেনাপতি কালাপাহাড়, বামদিকে ছিলেন বাদশাহর  চাচাতো ভাই জুনায়েদ খান কররানি, মাঝে ছিলেন উড়িষ্যার নাজির (প্রাদেশিক গভর্নর) খানজাহান এবং পেছনে ছিলেন পুরীর শাসনকর্তা কুতলু খান লোহানী। প্রত্যেকের অধীনে ছিলো ১০ হাজার করে সৈন্য।

মুঘল বাদশাহ আকবর পূর্বেই বাংলার দুই জন কর্মকর্তা-কে কিনে নিয়েছিলেন। একজন ছিলেন প্রধান খাজাঞ্চি (রাজকোষাগারের প্রধান তত্ত্বাবধায়ক) শ্রী হরি বিক্রমাদিত্য এবং অন্যজন ছিলেন পুরীর প্রশাসক কুতলু খান লোহানী। প্রধান খাজাঞ্চি শ্রী হরি ছিলেন সুলতান দাঊদ শাহের অত্যন্ত বিশ্বস্ত। তাই তাকে 'বিক্রমাদিত্য' উপাধি প্রদান করেছিলেন সুলতান। সেই শ্রী হরিই বিশ্বাসঘাতকতা করলো সুলতানের সাথে। তার কাছে ছিলো বাংলার বিশাল অর্থসম্পদের ভাণ্ডার।  আকবর তাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো যে, মুঘলদের সাহায্য করলে এবং বাংলার পরাজয় ঘটলে তাকে যশোরে স্বাধীনভাবে রাজত্ব করতে দেয়া হবে। কুতলু খান লোহানীকে আশ্বাস দেয়া হয় যে, তাকে উড়িষ্যায় রাজত্ব দেয়া হবে।

বাংলা এবং মুঘল ফৌজের মুহূর্মুহূ গোলাবর্ষণ চলতে থাকলো। তোপযুদ্ধ চলতে থাকে দুই বাহিনীর মধ্যে  মুহাররম থেকে রবিউস সানী মাস পর্যন্ত। এতে কারোরই তেমন কোনো ক্ষতি হয় নি। কিন্তু এমন একটি ঘটনা ঘটলো যা যুদ্ধের পুরো মোড়টাই পালটে দিলো।

৯৮৪ হিজরি ১৫ ই রবিউস সানী মোতাবেক ১১ই জুলাই, ১৫৭৬ "সাইফ-ই-পাখতুন ফৌজ" নামে পরিচিত জুনায়েদ খান কররানি প্রচণ্ড গরমের কারণে সেনাশিবিরের বাইরে চারপায়ার উপর ঘুমুচ্ছিলেন। তিনি প্রায়ই গরমের কারণে চার পায়ার উপরেই ঘুমাতেন। বিশ্বাসঘাতক কুতলু খান লোহানির মাধ্যমে মুঘলরা জানতে পারে যে, জুনায়েদ খান আজ শিবিরের বাইরে ঘুমাচ্ছেন। ফলে মুঘলরা সঠিক অবস্থানে গোলাবর্ষণ করতে সক্ষম হয়। গোলার আঘাতে জুনায়েদ খানের একটি পা উরু থেকে উড়ে যায়। প্রচণ্ড সাহসিকতার জন্য তাঁকে ডাকা হতো 'সাইফ-ই-পাখতুন ফৌজ' বা পাঠান বাহিনীর সর্বাধিনায়ক নামে। তিনি মারাত্মকভাবে আহত হওয়ায় ভেঙে যায় বাংলার 'মূল তরবারি', বাংলার বাহিনীর মূল শক্তি।

রাজমহল দুর্গম হওয়ায় নদী পার হয়ে আক্রমণ করা সম্ভব ছিল না। কিন্তু পরবর্তী দিন জনৈক গাদ্দার মুঘল বাহিনীকে নদী পার হওয়ার সুক্ষ্ম পদ্ধতি জানিয়ে দেয়। ফলে বাবা খান কাকশাল তাঁর বাহিনী নিয়ে নদী পার হয়ে কালাপাহাড়কে অতর্কিত আক্রমণ করে বসেন। কালাপাহাড় বাবা খান কাকশালের বাহিনীকে বিধ্বস্ত করে দেন। তা দেখে জানবারী অগ্রসর হন বাবা খান কাকশালের সাহায্যার্থে, কিন্তু তিনিও কালাপাহাড়ের তীব্র আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়ে যান। এতে রাজা তোডরমল কালাপাহাড়কে আক্রমণ করতে তার সমুদয় সৈন্যসহ এগিয়ে আসেন। কালাপাহাড় তাও বীরদর্পে প্রতিহত করেন। তখনো কালাপাহাড়কে কাবু করতে পারেনি কাফির আকবরের প্রেরিত মুঘল ফৌজ। এমন অবস্থায়, এই মুহূর্তে, বাংলার বাহিনীর পেছনের দিককার অধিনায়ক কুতলু খান লোহানী তার পুরো বাহিনী নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করে চলে যান। বাংলার মাঝের বাহিনীতে ছিলেন শ্রী হরি বিক্রমাদিত্য। তার কাছে ছিলো বাংলার সমস্ত অর্থসম্পদ। ঠিক সেই মুহূর্তে শ্রী হরি বিক্রমাদিত্য সকল ধন-সম্পদ ও তার বাহিনী নিয়ে রণক্ষেত্র থেকে সটকে পড়েন সুন্দরবনের গহীন অরণ্যে। যুদ্ধের এই মুহূর্তে শহিদ হন বাংলার বাহিনীর মাঝের দিককার অধিনায়ক উড়িষ্যার নাজির খান জাহান।

সবাই অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করে, নিজের পা উরু থেকে উড়ে যাওয়ার পরও জুনায়েদ খান কররানি রণহস্তীর পিঠে চড়ে যুদ্ধ করে যাচ্ছেন। মুজাফফার আলী খান তুরবাতি  সকল শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন জুনায়েদ খানের উপর। জুনায়েদ খানের তীব্র আক্রমণে মুঘল বাহিনী বিধ্বস্ত হলেও পায়ের প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ শুরু হলে শহিদ হন জুনায়েদ খান কররানি। তিনি লুটিয়ে পড়েন হাওদাপৃষ্ঠে।

এই প্রকট অবস্থায় যখন বিশাল মুঘল বাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করতে গিয়ে বাংলার বাহিনীর সবাই যখন একে একে শহিদ হচ্ছিলো তখন কালাপাহাড় নিজে রণক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যান ও বাদশাহকে পলায়নের জন্য বারবার তাগাদা দিতে থাকেন। পুরো মুঘল ফৌজ দাঊদ শাহকে ঘিরে ধরে। দাউদ শাহ প্রচণ্ড বিক্রমে মুঘল বাহিনীকে প্রতিরোধ করছিলেন। প্রচণ্ড যুদ্ধে বাদশাহর ঘোড়াও নিহত হয়। তিনি একজন সৈনিকের ন্যায় সৈন্যদের কাধে কাধ মিলিয়ে মাটিতে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করছিলেন। তাঁর বীরত্ব এতোটাই ছিলো যে আকবরের সভাপণ্ডিত আবুল ফজল লিখেছেন— "সেই 'উগ্র সিংহ' নিজ বাহুবলে অনেককেই আহত ও নিহত করলেন। তাঁর এতোটাই তীব্র ছিলো যে দ্বিতীয় কোনো আঘাতের প্রয়োজন হচ্ছিনা। যাকেই তলোয়ার দিয়ে আঘাত করছিলেন তারই মাথা তার পায়ের কাছে পড়ছিলো। যার গায়েই তিনি বর্শা নিক্ষেপ করছিলেন তার পিঠ এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে যাচ্ছিলো। তিনি যদি কোনো অশ্বারোহীকে আঘাত করছিলেন, আরোহী সহ সেই ঘোড়াকে তিনি দ্বিখণ্ডিত করছিলেন"

বাদশাহ দাঊদ শাহ পরাজয় আসন্ন জেনে পালিয়ে যেতে সম্মত হন। কিন্তু তিনি ঘোড়া পাচ্ছিলেন না। এমন সময় তাঁর জনৈক ভৃত্য দালিত বাদাখনী নিজের ঘোড়া তাঁকে এনে দিলো এবং জঘন্য বিশ্বাসঘাতকতা করে তিনি কোন পথে যাচ্ছেন তা মুঘলদের জানিয়ে দিলো। দাউদ শাহ বেশিদূর যেতে পারলেন না। সামনে একটি নদী পড়লো, নদীর কাদাতে দাঊদ শাহর ঘোড়ার পা আটকে গেলো। মুঘল সৈন্যরা বাদশাহ দাঊদ শাহ কে ঘিরে ধরলো। তিনি আর পালাতে পারলেন না। তাঁকে বন্দি করলো দিল্লির ফৌজ। তাঁকে খান জাহানের সামনে নিয়ে আসা হলো।

খান জাহান ক্রুব্ধ স্বরে জিজ্ঞেস করলেন- সেই সব চুক্তির, বন্ধুত্বের আজ কী হলো?

বাদশাহ দাঊদ শাহ জবাব দিলেন- সেইসব মুনীম খানের সাথে হয়েছিলো খান জাহান দাঊদ শাহকে বাদশাহ আকবরের বশ্যতা স্বীকার করার আহ্বান জানালেন।

বাদশাহ দাউদ শাহ কররানি উদ্ধতস্বরে জবাব দিলেন- "বাংলার বাদশাহ একমাত্র আসমানের বাদশাহ ব্যতীত অন্য কারো সামনে মাথা নত করে না"

অতঃপর- তীক্ষ্ণ তরবারি দ্বারা দাঊদ শাহর মাথা কেটে ফেলা হলো। নিথর দেহটি তাঁর রাজধানী তান্ডায় ঝুলিয়ে রাখা হলো। তাঁর কর্তিত মস্তক আকবরের রাজসভায় পাঠানো হলো।

আর এভাবেই বিধর্মী শ্রী হরি ও স্বধর্মী কুতলু খান লোহানির জঘন্য বিশ্বাসঘাতকতার ও স্বার্থপরতার ফলে ১২ ই জুলাই, ১৫৭৬ আজকের এই দিনে পরাজিত হয় বাংলা সালতানাত, পতন ঘটে বাংলার সার্বভৌমত্বের, লুপ্ত হয় বাংলার স্বাধীনতা- বাংলা পরিণত হয় দিল্লির উপনিবেশে। বাংলার শেষ স্বাধীন সম্রাট দাঊদ শাহ কররানির করুণ মৃত্যুর মধ্য দিয়ে দিল্লির আগ্রাসী হিন্দুস্থানি বাহিনীর কাছে করুণ পরাজয় ঘটে বাংলার। দিল্লির কাছে হৃত হয় বাংলার স্বাধীনতা। অস্তমিত হয় বাংলার স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য। বাংলার স্বাধীনতা হারানোর আজ ৪৪৬ বছর।


তথ্যসূত্র:
১. আইন-ই আকবরী - আবুল ফজল
২. আকবরনামা - আবুল ফজল
৩. Bengal Chief's Struggle - নলিনী কান্ত ভট্টশাল
৪. SISB Foundation

লিখেছেন: রাজিত তাহমীদ জিত

Previous Post
Next Post
Related Posts